লোককথা
(নানা উঠানে ঢাকি কাটা সের কূলা ঝাটা শামটা মেরামতে ব্যস্ত জৈনক্য নাতির প্রবেশ)
নাতিঃ শালা নানা ঢুড়তে ঢুড়তে পাগলা হনো।নানি কলো বারা গেছে হ্যামি পন্ডলপাড়া হিন্দুপাড়া ঘুরা খাড়ার পাড়ত তাও পানু না! মানুষ বুড়া হলে ক্ষেপা যায়। আর ছোঁড়া কালে দেওয়ানা! (নানা অন্যপথে প্রবেশ করে) ওরে শালা নানা এটি?- আসসালামু আলাইকুম নানা! ক্যাংকা আচু
নানাঃ ওয়া আলাই কুম সালামু। সিংক্যায় আছি- লাতি!- অসময়ে কুন দিশা লিয়া আচচু!
নাতিঃ ক্যা ভয় পাচ্চো নানা?- তোর ওই মানে হ্যামার চ্যাংড়া নানি দিকে লজর দিমু না। (নানা চোখ রাঙিয়ে ধমক দেয় নাতি নানার কাজ দেখে)-
এ্যালা আবার কি?
নানাঃ আষাঢ় মাসের আকাশ ভাঙ্গা পলো না-কি?
( গান রঙ কইরা হাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায় আরে বুকটা ফাইট্টা যায় আরে বন্ধু্ যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া..)
নাতিঃ বুকের মধ্যে দারুণ ঝড় নানা- (বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের স্মরণে আবু সাইদকে নিয়ে কতা কয়)
নাতিঃ কিছুক্ষণ আগে কলু না!- আষাঢ মাস! একন তো আগুন মাস আষাঢ মাস পালু কুট্টি! তা ওল্যা কতা কইয়ো না তো নানা!
নানাঃ তালে কোনডা কমু!
নাতিঃ এই যে- এ্যালা টিকঠাক করুচো! কি হবি বে সেইল্যা ক?
নানাঃ ল বা ন বে লবান।
নাতিঃ লবান? -ও হ্যামি লবন এ্যানা কমই খাই!
নানাঃ হ্যামি কই কি আর ওই শোনে কি? সয়তানের-বাস্ক্য হাতে থাকলে যা হয়? (সবাই কে ইঙ্গিত করে)
নাতিঃ -তা এ্যালান দিয়া কি হবি?
নানাঃ তোরা তো কলি কালের ছোঁড়া! -খালি ত ঠোকায় চলিস! এসব বুঝবু না বে (আবেগ)-ওল্যাই হ্যামাকেরে ঐতিহ্য!
নাতিঃ ঐতিহ্য মানে- ত্যাড়া কতা না কয়া সোজা কতা কতো নানা!- হ্যামার তো লবান ক্যাম্বা হিদু হিদু নাম লাগে।
নানাঃ তালে শোন-
( মিউজিক হিদু বাড়িত আমন্ত্রণ দিতে আমরা যাইতান বাউলগান সারিগান আন্দদের তুফান মিলিয়া বউলা গান আর নৌকা দৌলাইতাম হায়েরে.. আগে কি দিন কাটাইতাম)
নাতিঃ পানি পানি পানি দি তো...
(বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের স্মরণে মুগ্ধকে নিয়ে নানা কতা কয়)
নানাঃ পানি? ওরে শালা গরমের ওয়াজ শীতে করলে যা হয়?- ও-ই ডা গত আন্দোলনের মুগ্ধ বে। -এবার কতো কে কইছে লবান হিদু হিদু লাগে?
নাতিঃ হ বুচচি নানা। সেদিন হুজুর কলো যে!
নানাঃ ও-ই ডা গুগলো মামা জানে?
নাতিঃ গুগলো মামা মানে-
নানাঃ তোর হাতে শয়তানের টাসে দেখ! ?( মোবাইলে দেখে)
নাতিঃ আরে হ্যামাকের নানা তো ইসমার্ট আছে!- মোবাইলে জানে! ও নানা একন দেখো-লোহার হাল লোহার মাড়া, কলের চাল, কলের পানি আরও কতো কি-?
নানাঃ প্যাকা গেচো।-কতায় কয়- বাঁশের চাইতে কঞ্চি বড়! আচ্চা ক কতো দেকি আগে মানুষ! -না ধর্ম্ম! (আর ৫/৬ জন প্রবেশ করে)নাতিঃ মানুষ!
নানাঃ তালে কতায় কতায় ধর্ম ঠেকাতে যাস কেন?
নাতিঃ ( এই সবায়কে নানা কর্ম ডাকি কাটা সের দেখিয়ে বলে ) তোরাই ক হ্যামাকেরে নানা এ্যালা দিয়া কি করবি? সবাই ঃ হ নানা এ্যানা খুলা কতা ক তো?
নানাঃ তফনের গিরা শক্ত করা বাধ-
নাতিঃ ওলা কইও না তো নানা! শোন-নানা, শুনলাম-! সমর নানার চ্যাংড়া বউ লাতির সাথে নাকি ফুটা গেছে?- মানে চম্পট...
নানাঃ ক্যা রে- ওলা ছারা ভালো কিছু ভাববার পারিস না? শয়তানের বাসকো হাতে থাকলে খারাপ ছাড়া ভালো দেখপার পারবু.?-শোন বে-এখনো ১৬/১৭ বছরের কতো ছুড়ি লাইন দিয়ে আছে? হুমায়ুন নানা -শাওন, ঢাকার তিশা- আর মোস্তাক নানা কতা বেমাকেই জানে?
আরে কতায় কয় শক্ত মরদের খুঁটি শক্ত। তাঁর সবেই ঠিক?
নাতিঃ ওল্যা আউলা ঝাউলা প্যাচাল বাদ দেও- জিলা কবার চাচ্চিলা সেলাই কও!
নানাঃ তোরা কলি কালের ছোঁড়া ছুঁড়ি খালি মিচ্চিকোনা বেশি বুজিস! প্রবাদ আছে- বেশিই বুঝিস আর লাব পাড়িস মন্ডলের খুলিত। লবান বে লবান-
নাতিঃ সেডা আবার কি?
নানাঃ বাংলা ঋতুচক্র বুজিস তো!
নাতিঃ না নানা!- খালি পান্তা মাস আর পিটা মাস চিনি!
নানাঃ বাংলা বার মাসের ছয়ডা কাল আছে (নানা সেই কালের বর্ণনা করে প্রকৃতি) হেমন্ত কালের দ্বিতীয় মাস আগন মাসের পয়লা তারিখে লবান হয়। তর আগত হ্যামাকেরে গেরস্তরা ঘরে লেপন-পোচন, গোলা, খলা-খুলি ঠিককরা, সন্ধ্যা হলে আগনাত ধানের মাটির তৌলাদ সিদ্ধ করা কালচার খাজুর গাছের রস দিয়া পুরান গাইয়ের দুধ আর পকুর পাড়ের নারকল আহঃ কি মৌ মৌ গন্ধ আর সাদ?।
নাতিরাঃ নানা দেকি সেকালই আচে। ওরে নানা ওল্যা আর চলে না। একন পায়ের উপর পা তুলা রঙিন আলো আর হিন্দি গানের
(মিউজিকঃ তো চিজ বারে হে মাস্ত মাস্ত ত চিজ বারে হে মাস্ত।)
নানাঃ ( বিরক্ত) পিলাসটিক পলিতিন মার্কা কাজ। এলার কারনেই তো মেলা অসুখ ধরছে। যেমন হাঁটার রোগ, ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, জন্ডিস আরও মেলা ?
নাতিঃ তা তোমার এলা দিয়া কি হবি খুলে কও তো নানা-
(ঢাকি কাটা সের সানকি সহ নানা পরিবেশ বান্ধব উপকরণের কতা নিয়ে কতা কয়)
নাতিঃ ভালোই তো কলু নানা! হ্যামি এনা কই? হ্যামরা যে মুক্ত বাতাসে অকসিজেন নিচ্ছ তার কতা আর পরিবেশের কথা ভেবে আমরা প্রতিবছর কমপক্ষে একটা করে গাছ লাগায়।
নানাঃ এ বার বুচচি! -তোর বয়স হচে। এই শীতের আগে তোর একটা ব্যবস্থা করমু লে
নাতিঃ ও নানা সত্যি! ভালোই কলু। চল-এবার খালি লবান খালি খাবার মন চাচ্ছে?
নানাঃ ত চলেক। -তোর নানি নতুন কলাপাতায় মাটির সানকি পিতলের জগৎ আর মাটিত বসার পিড়া লিয়া বসে আছে...
নাতিঃ তা চলেক বে নানা- ও নানা
নানাঃ কি হলো আবার!
নাতিঃ সেই লবানে আর কি কি হতো-
নানাঃ পুঁথি আর গীত আর
নাতিঃ তালি পুঁথি কি? ( পুঁথি বর্ণনা করে নিজেই পুঁথি কয় নাতিরা হুকারী ধরে)
তারা রায় চৌধুরী ছিল এই মুল্লুকের মস্ত জমিদার। অত্যাচার পুরা মুল্লুক হিলো গো ছারখার।
আছিল এক মুসলমান মাঝি খাইতো নাও বাইয়া, তারি ঘরতে ছিল জুয়ান এক সুন্দরী মাইয়া।
চৌধুরীর এক বিবি রক্ষিতা অনেক জন, মাঝির মাইয়াও তরে কাড়ি নিল মন।
বরকান্দাজ পাঠাইলো যে মাঝিরো মন্দিরে, খবর শুনে মাঝি কান্দে কন্যাও কান্দে রে!
আপন মন্দিরে হইলো না ঠাঁয় সতীত এর তরে।
চৌধুরী বানািলো মহল উত্তর মাঠের মাঝে দুই দিনে শেষ করলো দুইশত রাজে।
ধর্ম বাচাইতে কন্যা পান করিলো জহুর জার জারে সেই দিন থেইকাই শূন্য মহল বাসে কন্যার হাহাকারে।
নাতিঃ হ্যামি এখকান কই!
নানাঃ ক
(নাতিরা তা শুনে সবাই মিলে গীত কতে কতে নবান্নে নানার বাড়িত দিকে চলে যায়।)
-প্রস্থান
রচনাও নির্দেশনায়ঃ মোঃ আব্দুল বাছেদ তনু।
